রংপুরের পীরগঞ্জে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনায় অন্যতম হোতা গ্রেফতার সদ্য বহিষ্কৃত ছাত্রলীগ নেতা সৈকত মণ্ডল আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। শুনানি শেষে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
রোববার সন্ধ্যায় রংপুরের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. দেলোয়ার হোসেনের আদালতে জবানবন্দি দেন আসামি সৈকত মণ্ডল।
আদালতের সাধারণ নিবন্ধক মো. শহিদুর রহমান বলেন, আসামি সৈকত মণ্ডলের বিরুদ্ধে র্যাবের করা ডিজিটাল নিরাপত্তা (আইসিটি) আইনে একটি মামলা হয়েছে। বিকেলে তাকে আদালতে তোলা হয়। সেখানে বিচারকের কাছে ঘটনায় নিজের সম্পৃক্ততার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেন তিনি। একই ঘটনায় অন্য আরেক মামলায় সৈকত মণ্ডলের সহযোগী রবিউল ইসলামও স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
এদিকে ওই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) সুদীপ্ত শাহীন জানান, আসামি সৈকত মণ্ডল স্বেচ্ছায় ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়ে জবানবন্দি দিয়েছেন। এছাড়া তার সঙ্গে গ্রেফতার রবিউল ইসলামকে আদালতে তোলা হয়েছিল। তার বিরুদ্ধে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও লুটপাটের মামলা হয়েছে। তিনিও স্বেচ্ছায় ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা আদালতকে জানিয়েছেন।
এর আগে সহিংসতার ওই ঘটনায় তিন দিনের রিমান্ডে থাকা ৩৭ আসামিকে আদালতে তোলা হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান নতুন করে রিমান্ড আবেদন না করায় শুনানি শেষে তাদেরকেও কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। এসময় আদালতে আসামিপক্ষের একাধিক আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন। তারা জামিন আবেদন জানালে আদালত তা নামঞ্জুর করেন।
এদিকে সৈকত মণ্ডল কারমাইকেল কলেজের ছাত্রলীগের দর্শন বিভাগের সহ-সভাপতি পদে ছিলেন। ফেসবুকে উসকানিমূলক পোস্ট দেয়ায় গত ১৮ অক্টোবর তাকে সংগঠন থেকে অব্যাহতি প্রদান করে ছাত্রলীগ। পীরগঞ্জের ঘটনার পর পালিয়ে ছিলেন সৈকত মন্ডল ও ইমাম রবিউল ইসলাম। তাদের দুজনকে শুক্রবার (২৩ অক্টোবর) টঙ্গী থেকে গ্রেফতার করে র ্যাব।
রংপুরের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) কামরুজ্জামান জানান, মাঝিপাড়ায় সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনায় তিনটি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে। এছাড়া বাড়ি-ঘরে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটের ঘটনায় পৃথক একটি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় এখন পর্যন্ত ৬৪ জন গ্রেফতার হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত রোববার (১৭ অক্টোবর) রাতে ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে পীরগঞ্জের রামনাথপুর ইউনিয়নের বড়করিমপুর মাঝিপাড়া গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি-ঘরে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে উগ্রবাদীরা। এ ঘটনায় গ্রামের ১৫টি পরিবারের ২১টি বাড়ির সবকিছু আগুনে পুড়ে গেছে। সব মিলিয়ে অন্তত ৫০টি বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। হামলাকারীরা গরু-ছাগল, অলংকার, নগদ টাকাও নিয়ে গেছেন বলে দাবি ক্ষতিগ্রস্তদের। এ ঘটনায় পীরগঞ্জ থানায় দায়ের করা চারটি মামলায় ৬৪ জন গ্রেফতার হয়েছেন।